বর্তমানে অনলাইনে পাওয়া যায় সবই। নিত্যকার প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে বিলাসিতার জন্য যাবতীয় সামগ্রী সবই এখন অনেক সহজলভ্য। তার উপর অনলাইনে যা যা অর্ডার করা হয় সেগুলো আমরা পেয়ে যাই আমাদের দোরগোড়ায়।

সব কিছু অনলাইনে হলেও আমরা আমাদের প্রতিদিনের সব চেয়ে দরকারি জিনিসগুলো কেনার জন্য সবার আগে আমাদের বাসার কাছের মুদি দোকানেই যাই। সব থেকে বড় সুবিধা মুদি দোকানে পাওয়া যায় সেটা হল, পরিচিতির কারণে জিনিস কেনার পরও তা ফেরত দেয়া যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই।

আবার একই জিনিসের অনেক রকম ভ্যারাইটি বা ব্র্যান্ডের পণ্য থাকে যা আমরা নিজেরাই পচ্ছন্দমত কিনতে পারি। সাধারণ মানুষের জীবনকে, বিশেষ করে শ্রমজীবী ​​শ্রেণীর মানুষদের জীবনকে সব সময়ই সহজ করে রেখেছে মুদি দোকানগুলো।

কিভাবে মুদি ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়, কীভাবে সঠিক পণ্য নির্বাচন করা উচিত, আর কীভাবে অনলাইনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসা বাড়ানো যায় – এই সকল বিষয়ে আজ আমরা  আলোচনা করেছি ।

তাই, যদি আপনি মুদি ব্যবসা শুরু করতে চান বা বর্তমান ব্যবসা আরও বড় করতে চান, তাহলে এই ব্লগটি আপনার জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে।



মুদি দোকান ব্যবসার গুরুত্ব এবং জনপ্রিয়তা


আমরা সবাই আমাদের বাসার নিচের আটপৌরে দোকানটায় অনেক বেশি নির্ভরশীল। কারণ গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সর্বত্রই মুদি দোকান দেখা যায়। বলা যায় একটি গলিতে তিন থেকে চারটি মুদি দোকান থাকে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মেটানোর অন্যতম নির্ভরযোগ্য উৎস। 


মুদি দোকান ব্যবসায়ের গুরুত্ব:

মুদি দোকানের গুরত্ব তো অপরিসীম। বর্তমানে আমরা এতো অনলাইন নির্ভর হওয়া সত্ত্বেও আমরা মুদি দোকানগুলো যেভাবে আমাদের জীবনটাকে সহজ করে রেখেছে তা বলার বাইরে। 

দেশের অর্থনীতিতে অবদান:

২০২৪ এ সামগ্রিক মুদি দোকানগুলো ৩০-৩২% এর মত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখেছে। কীভাবে? ২৪ মিলিয়ন এর মোট মানুষ মুদি দোকানের ব্যবসায়ের সাথে জড়িত যা স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে তো বটেই, সাথে অর্থনীতির চাকাকে রেখেছে সচল। 

গ্রাহকদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ:

মুদি দোকান মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চাল, ডাল, তেল, মসলা, সাবান এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করে। একটা এলাকার মানুষ যখন তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে চায় তখন কিন্তু মুদি দোকানেই যায়। 

সময় এবং খরচ সাশ্রয়:

যেহেতু প্রতিটি ঢাকার প্রতিটি গলিতে গলিতে মুদি দোকান, তাই আমরা সবাই পণ্য মুদি দোকান থেকে কিনি যা আমাদের সময় ও খরচ বাঁচায়। 

জিনিস অনুপাতে দাম কম:

পাইকারি বাজারে যেয়ে মাসিক বাজার করা স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য প্রায় অসম্ভব। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য মুদি দোকান একটি সহজ সমাধান।  এখানে পণ্য খুচরা হিসেবে পাওয়া যায় যা একদম স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য উপযোগী।

দূরবর্তী গ্রাহকদের সেবা:

গ্রামে গঞ্জে এখনও সুপার শপ নেই বা অনলাইন ডেলিভারি পুরোপুরি কার্যকর নয়; সেসব এলাকায় মুদি দোকান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


মুদি দোকান ব্যবসায়ের জনপ্রিয়তা

আমাদের নজরে মহল্লার দোকানটি আটপৌরে হলেও এর জনপ্রিয়তা কিন্তু তুঙ্গে। নেই আহামরি চাকচিক্য, সাদামাটা দোকানগুলো যারা চালান তারা ‘চাচা, মামা, ভাই’ ইত্যাদি সম্বোধনের অধিকারী। কিন্তু এই দোকানগুলোতে পাওয়া যায় চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে ছোটখাট  ইলেকট্রনিক্সও।

চলুন দেখে নেই মুদি দোকানের জনপ্রিয়তার রহস্যগুলো

সহজলভ্য পণ্য সরবরাহ:

প্রতিটি এলাকার মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় যাবতীয় পণ্য মুদি দোকান থেকে সহজেই পেয়ে থাকে তো বটেই, এছাড়াও হিসাবের পুরোনো খেরোখাতায় চলে লাভ-লোকসান, বাকি-নগদের অঙ্ক। তাই যখন খুশি আর যত টাকার খুশি পণ্য কেনা বেঁচা চলে অবিরাম।

সামাজিক বন্ধন:

বর্তমানে আমরা আমাদের পাড়া -পড়শীদেরকে দেখিই না, কিন্তু মুদি দোকানে আমরা সবার সাথে কিন্তু চেনা-পরিচিত হয়েই। আর বিক্রেতা ও ক্রেতার মাঝে তো তৈরি হয়ই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যা শুধু ব্যবসায়ের নয়, বরং সামগ্রিক এলাকাবাসীর মধ্যৈ তৈরি হয় সুসম্পর্ক।

কম বিনিয়োগে ব্যবসায় শুরু:


মুদি দোকান ব্যবসায় শুরু করতে তেমন অভিজ্ঞতা ও মূলধন প্রয়োজন নেই। তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগেই শুরু করা যায় একটি লাভজন মুদি দোকান। শহরে বা গ্রামে যদি মুদি দোকান ব্যবসায় শুরু করতে হয় তবে মোটামুটি কিছু টাকা নিয়েই শুরু করা যায়। 

বিশ্বাসযোগ্যতা:

স্থানীয়দের সাথে পরিচয়-পরিচিতির সুবিধার কারনে এই ব্যবসাটা দারুণভাবে প্রসার পায়। এছাড়াও প্রতিদিন যারা গৃহস্থালির বাজার-সদাই কেনেন তারা অনেক সময়েই ফোনে অর্ডার দেন, দোকানের মালিক বা কর্মচারীই তা ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দেন। এই যে বিশ্বাসের জায়গা-এটাই জনপ্রিয় হওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম। 

মুদি দোকানের জনপ্রিয়তা এবং গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে, যা একে ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি নির্ভরযোগ্য ও গতানুগতিক চাকরির দীর্ঘস্থায়ী বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলেছে।

মুদি দোকান চালানোর জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি

১. মুদি দোকানের সৃজনশীল নাম রাখা :

নতুন দোকান দেয়ার আগে অতি অবশ্যই একটা সুন্দর এবং সহজ নাম বাছাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নামটাই যদি সুন্দর না হয় তবে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কীভাবে পাবে? নামটা রাখতে হবে সহজ, ছোট, ইউনিক, ট্রেন্ডি এবং প্রোডাক্টের সাথে মিল রেখে।

২. মুদি দোকান দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন : 

মুদি দোকান ব্যবসায়ের জন্য আসলে কোন মূলধন নির্দিষ্ট করা নেই। কত টাকা মূলধন প্রয়োজন হবে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে ব্যবসায় কীভাবে শুরু করতে হবে, স্থান, কত রকমের প্রডাক্ট দোকানে থাকবে এবং দোকানটির অভ্যন্তরীন সাজসজ্জাতে। যদি বড় পরিসরে এই ব্যবসায় শুরু করলে অব্যশই অনেক বেশি টাকা মূলধন প্রয়োজন হবে; আর ছোট পরিসরে শুরু করলে তাহলে কমের মধ্যেই শুরু করা যাবে লাভজনক ব্যবসায়টি।

৩. মুদি দোকান শুরু করার নিয়ম ও প্রক্রিয়া: 

ক)  অব্যশই ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করুন।

খ)  আপনার মুদি দোকানটি নিবন্ধন করতে হবে এবং এটার সাথে যত প্রকার ডকুমেন্টস লাগবে তা প্রস্তুত করে জমা দিতে হবে।  

গ) উপযুক্ত স্থান সিলেক্ট করুন যেখানে বেশি মানুষ আসে এবং কাস্টমারদের উপযুক্ত সুবিধা থাকে।

ঘ)  আপনার মুদি দোকান সজ্জিত করুন।

ঙ) কর্মীদের নিয়োগ করুন এবং ব্যবসায়ের সমস্ত প্রক্রিয়াগুলি শুরু করুন।

চ)  ব্যবসায়িক পরিচালনা ও প্রচারণা শুরু করুন।


৪. দোকানের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি নথি ও লাইসেন্স

ক) নাম ছাড়পত্র (Name Clearance)
খ) আরজেএসসি-তে নাম চেক ও সংরক্ষণ
গ) মেমোরান্ডাম ও আর্টিকেলস অফ অ্যাসোসিয়েশন (MOA & AOA)
ঘ) ব্যবসার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ কার্যাবলী নির্ধারণ
ঙ) স্ট্যাম্প ফি
চ) ফরমস
ছ) স্থানীয় ট্যাক্স অফিস (টিন) সংগ্রহ  

এই সমস্ত নথি ও ফর্মগুলো যথাযথভাবে জমা দিয়ে দোকান নিবন্ধন কবলে পরে মুদি দোকান এর কার্যক্রম সঠিক ভাবে শুরু করা যাবে। 

মুদি দোকানে  কি কি পণ্য রাখা উচিত?

মুদি দোকান কেন ও কীভাবে শুরু করবেন, সবই তো হলো, তাহলে এখন দরকার হল কী কী পণ্য দিয়ে সাজাবেন দোকানটা। মুদিখানার দোকান মানেই শত শত পণ্যের সমারোহ। সঠিক পণ্য না থাকলে ক্রেতাও থাকবে না। তাই আমাদের দরকার একটা দোকানের পণ্যের লিস্ট: 

ক) খাদ্যদ্রব্য জাতীয় পণ্য: বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চাল, ডাল, তেল, আটা, ময়দা, বেসন, চিড়া, সুজি, সেমাই, মসলা, তরল পানীয়, বেকারি আইটেম, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি।  

খ) স্টেশনারি পণ্য: কলম, ডায়েরি, পেনসিল, মার্কার পেন, কালার পেন, কালার পেনসিল, স্কচটেপ, টেপ, সুতা, চাকু, ব্লেড, রেজার, লাইট, মোমবাতি, তার ইত্যাদি। 

গ) বাথরুম, রান্নঘরের সাথে সম্পর্কিত পণ্য: সাবান, শ্যাম্পু, লোশন, বিভিন্ন তেল, ক্রিম, মেহেদী, কনডিশনার, ডিটারজেন্ট, টয়লেট পরিস্কারক, এয়ার ফ্রেশনার, টুথপেস্ট ইত্যাদি। 

ঘ) শিশুদের চাহিদা সম্পন্ন পণ্য: সেরেলাক, হরলিকস, চিপস, কেক, চকলেট ইত্যাদি।  

ঙ) বাসা বাড়ির নিত্য প্রয়োজনীয় ও স্বাস্থ্য-সুরক্ষা সম্পর্কিত পণ্য: বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্লোর ক্লিনার, স্যাভলন, ডেটল, হ্যাক্সিসল জাতীয় এন্টিস্যাপটিক লিকুইড ইত্যাদি। 

মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা আসলে কোন তালিকাতেই সীমাবদ্ধ নয়! শুরু শুরুতে এসব পণ্য নিয়ে সাধারনত মুদি দোকান শুরু করা হয়, তারপরও মহল্লার মানুষদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ পণ্য যেমন নানা রকমের ফলমূল ও শাক সবজিও রাখা যায়। এজন্যই মুুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সময়, এলাকা এবং কাস্টমার ভেদে ভিন্ন হতে পারে।

পণ্য সরবরাহের সমস্যা সমূহ

মুদি দোকান বা মুদিখানার দোকান বেশ জনপ্রিয়, লাভজনক; কিন্তু এটার মাল স্টক করা কিন্তু ভালোই কঠিন। মুদি দোকান আসলে চলেই কাস্টমারদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উপস্থিতিতে! সেটাই যদি না থাকে তাহলে তো মুশকিল। মুদি দোকানে দ্রুত পণ্য পাওয়া না যাওয়ার কারণগুলো দেখি: 

১. সরবরাহ ও ডেলিভারি সমস্যা:

মুদি দোকানগুলোর নির্ভরযোগ্য সরবরাহ ব্যবস্থা আমাদের এখানে এখনও সেভাবে নেই। মাল নিতে হলে দোকানদারকে যেতে হয় বিভিন্ন জায়গায়, হোক সেটা পাইকারি বাজার বা ডিস্ট্রিবিউটর। এতে করে সময় তো লাগেই, সাথে আবার দোকান বন্ধ থাকে প্রায়ই। এই কারণে তাদের লাভটা ঐভাবে চোখে পড়ে না। 

আবার, আমাদের দেশে এখনও দোকানে দোকানে প্রতিদিন পণ্য ডেলিভারি দেয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত হয় নি। ফলে অনেক অনেক পণ্য নিয়ে মুদি দোকান চালানো কঠিন।

২. জায়গা স্বল্পতা: 

মহল্লার মুদি দোকানগুলো সাধারণত ছোট আকারের হয় এবং তাদের কাছে বিশাল পরিমাণ স্টক রাখার জায়গা থাকে না। এছাড়াও মুদি দোকানের কম্পিটিটর সুপারশপ বা বড় দোকানের মতো আগেভাগে প্রচুর পণ্য সংগ্রহ করে রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই কোনো পণ্য শেষ হয়ে গেলে নতুন করে আনতে সময় লাগে।

৩. কর্মচারীর সংখ্যা কম অথবা নেই: 

সাধারণ মুদি দোকানগুলোতে খুব বেশি কর্মচারী থাকে তো নাইই, বরং বেশিরভাগ সময় মালিক নিজেই দোকান চালান। একসঙ্গে যদি অনেক গ্রাহক আসে, তাহলে সবার প্রয়োজন মেটাতে সময় বেশি লাগে। আর অনেক কাস্টমারই এমন হুলস্থুল অবস্থায় পণ্য কিনতে চায় না আর আমাদের ছোট মুদি দোকানগুলো তাদের কাস্টমার হারায়। 


৪. ডিজিটালাইজেশন নেই: 

সুপারশপের মতো মুদি দোকানগুলোতে ডিজিটাল ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট থাকে না অথবা QR কোডের মাধ্যমে পণ্য সংগ্রহ করা এখনও ঐভাবে পরিচিতি পায়নি। তাই দোকানদারকে নিজে হিসাব রাখতে হয়—কোন পণ্য শেষ হচ্ছে, কোনটা আনতে হবে। এতে সময় বেশি লাগে এবং অনেক সময় গ্রাহকরা পণ্য না পেয়ে অপেক্ষা করতে বাধ্য হন।

৫. দোকানে বাকিতে কেনার সংস্কৃতি: 

অনেক গ্রাহক মুদি দোকান থেকে বাকিতে পণ্য কেনেন এবং পরবর্তীতে টাকা পরিশোধ করেন। এটি দোকানদারকে বাড়তি হিসাব রাখতে বাধ্য করে, ফলে লেনদেনের সময় বেশি লাগে। সুপারশপে যেখানে সরাসরি ক্যাশ বা ডিজিটাল পেমেন্টে কেনাকাটা হয়, সেখানে মুদি দোকানে হিসাবের ঝামেলা বেশি হয়।

৬. নির্দিষ্ট কিছু পণ্য দ্রুত শেষ হয়ে যায়: 

কিছু জনপ্রিয় বা মৌসুমী পণ্য দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। যেমন রমজান মাসে ছোলা, খেজুর বা চিনি দ্রুত ফুরিয়ে যেতে পারে। দোকানদার নতুন করে অর্ডার না দিলে বা দ্রুত সরবরাহ না পেলে সেই পণ্য পেতে দেরি হয়। 

৭. দোকানের মালিকের অনুপস্থিতি:

অনেক ছোট দোকানে মালিক একাই ব্যবসায় পরিচালনা করেন। যদি তিনি বাইরে যান বা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাহলে গ্রাহকদের অপেক্ষা করতে হয়। বিশেষ করে দুপুরে বা দুপুরের পর অনেক দোকান কিছু সময়ের জন্য বন্ধও থাকে। 

সহজে পণ্য সরবরাহের প্লার্টফর্ম:

প্রিয়শপ – বাংলাদেশের মুদি দোকানিদের নিকট একটি আস্থার নাম।  ২০২২ থেকে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি সবচাইতে সহজ আর সুবিধাজনক সমাধান প্রতিনিয়ত নিয়ে আসছে। দোকানিরা এখন প্রিয়শপের মাধ্যমে তাদের ব্যবসায় চালাতে পারছে আরও কার্যকরীভাবে। 

প্রিয়শপ থেকে মুদি দোকানের পণ্য সরবরাহ ও স্টকিং করার সহজ উপায়গুলো হল:

১. অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সহজ অ্যাক্সেস: প্রিয়শপের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ভিজিট করে সহজেই মুদি দোকানের প্রয়োজনীয় সব পণ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

২. এক জায়গায় সব পাইকারি পণ্য: চিনি, ডাল, তেল, চাল, মশলা থেকে শুরু করে মুদি দোকানের সব প্রয়োজনীয় পণ্য পাইকারি দামে পাওয়া যায়, যা সময় ও খরচ বাঁচাতে সাহায্য করে।

৩. স্টক ম্যানেজমেন্ট সহজ হয়: প্রিয়শপ থেকে পণ্য কিনলে দোকানের মালিকরা সহজেই তাদের স্টক আপডেট রাখতে পারেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত রিফিল করতে পারেন।

৪. দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য ডেলিভারি: প্রিয়শপ সরাসরি পণ্য সরবরাহ করে, তাও আবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে। ফলে দোকানদারদের পাইকারি বাজারে গিয়ে সময় নষ্ট করতে হয় না।

৫. ডিজিটাল পেমেন্ট ও সহজ অর্ডার সিস্টেম: বিকাশ, নগদ বা ব্যাংক পেমেন্টের মাধ্যমে সহজেই লেনদেন করা যায়, যা ক্যাশ ম্যানেজমেন্টকে সহজ করে তোলে।

এভাবেই প্রিয়শপ মুদি দোকানদারদের জন্য সহজ ও স্মার্ট সমাধান নিয়ে এসেছে, যা ব্যবসাকে আরও লাভজনক করে তুলতে সাহায্য করে।


মুদি দোকানের হিসাব রাখার নিয়ম:

মুদি ব্যবসায়টা ছোট হোক বা বড়, তা কিন্তু দোকানিদের এক টুকরো স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটা চালিয়ে নিতে হলে ব্যবসায়টির যথাযথ দেখাশোনা করতে হবে। আর ব্যবসায়ের যথাযথ দেখাশোনা করতে হলে প্রতিদিনের যে লেনদেনগুলো হচ্ছে তার ঠিকঠাক হিসাব রাখতে হবে। এই হিসাবগুলো যদি ঠিকভাবে রাখ না যায় তবে ব্যবসায় কোনোভাবেই সফল হতে পারবে না। 

ব্যবসায়ের হিসাব রাখার নিয়মগুলো জেনে নেই এক নজরে: 

১.  ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়ের হিসাবের জন্য ভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার। 

২. প্রাপ্তিগুলোর হিসাব যথাযথভাবে রক্ষণ। 

৩. ব্যবসায়ের নগদ প্রবাহের হিসাব রক্ষণ। 

৪. খরচের সব রশিদ এক জায়গায় রাখতে হবে। 

৫. রশিদ এবং চালানপত্রের মধ্যে পার্থক্যকরণ।   

৬. নগদ খরচগুলোর হিসাবরক্ষণ।  

৭. বিক্রয় করের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে।  

৮. হিসাবরক্ষণের ডাবল এন্ট্রি ব্যবস্থাটিকে বুঝতে হবে।  

৯. আর্থিক বিবৃতিগুলো তৈরিকরণ। 

১০. বাজেট এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকরণ। 


মুদি দোকানের ভাউচার এবং অর্থনৈতিক রেকর্ড ম্যানেজমেন্ট:

ভাউচার হলো ক্রয়-বিক্রয়ের প্রমাণ, যা মুদি দোকানের লেনদেন সঠিকভাবে নথিভুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

ভাউচার ব্যবস্থাপনা:

একটি মুদি দোকানের লাভ-ক্ষতি ও আর্থিক হিসাব ঠিকঠাক রাখতে সঠিকভাবে ভাউচার ও রেকর্ড ম্যানেজমেন্ট করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি দোকানের আয়-ব্যয় ট্র্যাক করতে সাহায্য করে এবং ব্যবসায়ের উন্নতি নিশ্চিত করে।

কীভাবে ভাউচার সংরক্ষণ করবেন?

– প্রতিটি ভাউচার বা রশিদ ফাইল করে রাখা উচিত।

– ডিজিটাল রেকর্ড রাখতে Google Sheet বা অ্যাপ (যেমন: Bookkeeper, Tally) ব্যবহার করা যায়।

– প্রতিদিনের বিক্রির হিসাব হাতে লেখা বা POS মেশিনে রাখা যেতে পারে।

অর্থনৈতিক রেকর্ড ম্যানেজমেন্ট:

একটি মুদি দোকানের আয়-ব্যয়ের হিসাব ঠিকভাবে না রাখলে লাভ-ক্ষতির হিসাব গড়মিল হয়ে যেতে পারে। তাই নিয়মিত আর্থিক হিসাব রাখা প্রয়োজন।

বিক্রির হিসাব রাখা: প্রতিদিন বিক্রির মোট পরিমাণ লিপিবদ্ধ করা এবং নগদ ও বাকির হিসাব আলাদা রাখা।

পাইকারি খরচের হিসাব: কী পরিমাণ পণ্য কেনা হলো এবং কত টাকা খরচ হলো তা ট্র্যাক করা।

ব্যয়ের হিসাব: দোকানের বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন, দোকান ভাড়া ইত্যাদির হিসাব রাখা। 

লাভ-ক্ষতি বিশ্লেষণ: মাসিক ও বার্ষিক লাভ-ক্ষতির – রিপোর্ট তৈরি করা।

কীভাবে সহজে রেকর্ড সংরক্ষণ করবেন?

বই খাতাতেই হিসাব রাখা হয় সচরাচর। বর্তমানে মুদি দোকানের জন্য অনেক রকম সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় যা বেশ সহজ ও বাজেটফ্রেন্ডলি। 

মুদি দোকানে লাভের হিসাব কীভাবে করে?

মুদি দোকানে লাভের হিসাব করতে কিছু সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, যা আপনার ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা সঠিকভাবে বোঝাতে সাহায্য করবে। মুদি দোকানে লাভের হিসাব সঠিকভাবে রাখতে হলে বিক্রয়, খরচ এবং লাভের মধ্যে সঠিক সম্পর্ক ট্র্যাক করা জরুরি। যদি নিয়মিত হিসাব রাখ হয় এবং প্রতিদিনের বিক্রি ও খরচ মনিটর করা যায়, তবে সহজেই ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

দোকান পরিচালনার কৌশল এবং লাভ বাড়ানোর জন্য টিপস

খুচরা মুদি দোকান হোক বা রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়, এই ব্যবসায়ে অনেক লাভ থাকলেও সঠিক পরিকল্পনা ও দিক নির্দেশনার অভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে অনেকেই। কীভাবে সেসব ক্ষতি এড়িয়ে ব্যবসায়ে উন্নতি করা যায় সে ব্যাপারেই আজকে আলোচনা করবো।

চলুন দেখে আসি কীভাবে আপনি ব্যবসায়ে উন্নতি করতে পারবেন- 

সঠিক পণ্য নির্বাচন:

প্রথমেই আপনাকে বাজারে চলমান সকল পণ্য সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানাশোনা থাকতে হবে। যে যে পণ্যের চাহিদা বেশি সেসব পণ্যকে বাজার থেকে যাচাই-বাছাই করতে হবে।  রিটেইলারদের সেবায় নিয়োজিত প্রিয়শপ, বাংলাদেশের অন্যতম বিটুবি মার্কেটপ্লেস। প্রিয়শপ রিটেইল অ্যাপহোয়াটসঅ্যাপ মার্কেটপ্লেস এর মাধ্যমে সেবা দিয়ে আসছে। যা হতে পারে আপনার দোকানের কেনাকাটার প্রথম সঙ্গী।

সঠিক জায়গা থেকে পণ্য ক্রয়:

কোন জায়গায় আপনার পণ্য সঠিক দামে বিক্রি হচ্ছে তা জানা থাকতে হবে। শুধু কম দামে পণ্য ক্রয় করলেই হবে না। সেই সাথে পণ্যের গুণাগুণ যাতে ঠিক থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আর পণ্যের সেরা দাম ও সেরা মান নিশ্চিত করে প্রিয়শপ। 

ঝুঁকি কমান:

ঝুঁকি ব্যবসায়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর ব্যবসায় শুরু করার সময়ই ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। ব্যবসায়ে ঝুঁকি থাকবেই; তবে কোন কোন বিষয়ে ঝুঁকি রয়েছে সেসব ব্যাপারে ঠিকঠাক জ্ঞান থাকলে ঝুঁকি অনেকাংশেই এড়ানো সম্ভব।  

খাপ খাইয়ে নেয়া:

ব্যবসায়ক্ষেত্রে সবকিছু যে আপনার মনমত হবে তা কিন্তু নয়। আপনি ব্যবসায়ের প্রতি পদে নতুন নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন যা আপনার অবস্থার সাথে নাও মিলতে পারে। আর এসব ক্ষেত্রে আপনাকে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। আর মানিয়ে নিলেই আসবে সফলতা। 

ক্রেতাকে বুঝতে হবে:

গ্রাহক কিংবা ক্রেতাই সকল ব্যবসায়ের মূল। তাই তাদেরকে বুঝতে পারাই একজন উদ্যোক্তার সফলতার চাবিকাঠি। ক্রেতার চাওয়াকে বুঝা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করলেই আপনার ব্যবসায়ের উন্নতি হবে। 

ব্যবসায়িক পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করুন:

ব্যবসায় থেকে অর্জিত লাভের পুরো টাকা নিজের জন্য খরচ না করে কিছু অংশ আলাদা করে রেখে তা পরবর্তীতে ব্যবসায়িক পরিধি বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। 

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকবেই; তবুও উপরোক্ত কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে ব্যবসায় করলে ব্যবসায়ে উন্নতি আসবে অবশ্যই। শুভকামনা রইলো আপনার ব্যবসায়ের জন্য। যেকোন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে প্রিয়শপ আছে আপনার পাশে। 



মুদি দোকান ব্যবসায়ের জন্য ব্র্যান্ডিং

ব্যবসায়ের প্রমোশনের গুরুত্ব:

ব্র্যান্ডিং বা Branding হলো এমন কোন নাম, শব্দ, ডিজাইন, প্রতীক বা অন্য কোন ফিচার এর মাধ্যমে প্রকৃত গ্রাহকের মনে একটি পণ্য, সেবা, কোম্পানি বা ব্যক্তির জন্য একটি স্বতন্ত্র এবং স্থায়ী পরিচয় তৈরি করার প্রক্রিয়া।

কার্যকরী ব্র্যান্ডিং একটি দোকানকে যেমন আলাদা করে, তেমনি তাদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং পরিচিতি বাড়ায়। যেকোনো দোকানের চমৎকার একটি নাম বা লোগো খুব সহজে পরিচিতি পায়। মানুষ সহজে এসব নাম বা লোগো মনে রাখতে পারে। যা ব্র্যান্ড এবং এর গ্রাহকদের মধ্যে একটি শক্তিশালী এবং স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে।

ট্রেডিশনাল ব্র্যান্ডিং

মুদি দোকানের জন্য ট্রেডিশনাল ব্র্যান্ডিং বলতে দোকানের সাইনবোর্ড, ফ্লাইয়ার, পোস্টার এবং স্থানীয় বিজ্ঞাপন ব্যবহার করাকে বুঝায়। দোকানের ভেতর-বাহির আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো, স্থানীয় পত্রিকা বা রেডিও বিজ্ঞাপন দেওয়া এবং ফ্লাইয়ার বিতরণ করা খুবই কার্যকর। এছাড়া, গ্রাহকদের বিশেষ ডিসকাউন্ট ও ক্যাম্পেইন অফার করে ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়ানো যায়।

এছাড়া, স্থানীয় ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও ইভেন্টে অংশগ্রহণও আপনার দোকানকে জনপ্রিয় করতে সাহায্য করে। একটি ভালো গ্রাহক সেবা ও ফিডব্যাক সিস্টেম চালু করলে আপনার দোকান আরও বিশ্বাসযোগ্য এবং আস্থাভাজন হয়ে উঠবে।

অনলাইন ব্র্যান্ডিং

বর্তমান যুগে অনলাইন ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে নিজের মুদি দোকানকে আরও বড় পরিসরে পরিচিত করা হয়। ভিডিও কনটেন্ট বা লাইভ সেশনের মাধ্যমে পণ্য সম্পর্কে আরও জানানো যায়। 

এছাড়া, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন (যেমন: ফেসবুক অ্যাড, গুগল অ্যাড) ব্যবহার করে যেকোন মুদি দোকানই লক্ষ্যযোগ্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে পারেন। সঠিক ব্র্যান্ডিং কৌশল অনুসরণ করলে মুদি দোকান অনলাইনে দ্রুত জনপ্রিয় হতে পারে।

কীভাবে মুদি ব্যবসায় এর সাথে  অন্য ব্যবসায় চালানো যায়?


বর্তমানে কেউই শুধুমাত্র মুদি দোকানের ব্যবসায়ে লেগে নেই। একটু বাড়তি ইনকামের জন্য অনেকেই মুদি দোকানের সাথে সাথে বিভিন্ন রকমের ব্যবসায়ও চালাচ্ছে সমান তালে। কেউ বা রিচার্জ সেবা যেমন- মোবাইল রিচার্জ, ইন্টারনেট প্যাক রিচার্জ, ডাটা প্যাক সেবা প্রদান করছে; আবার অনেকেই বিকাশ, নগদ বা অন্যান্য মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস যেমন টাকা পাঠানো, টাকা গ্রহণ করে। এগুলো কিন্তু একটি লাভজনক সেবা, যা আপনি মুদি দোকানে বসেই করা সম্ভব।

মুদি দোকান চালানোর জন্য প্রযুক্তির ভূমিকা


প্রযুক্তির বা টেকনোলজির ছোঁয়া তো সব জায়গাতেই লেগেছে। প্রযুক্তির বিপ্লব ছড়িয়ে পড়েছে পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানেও। প্রযুক্তির  ব্যবহারে কোণায় কোণায় মুদি দোকানগুলোর বিক্রি বাট্টা বেড়েছে বহুগুণ। আর স্টার্টআপগুলো অসংখ্য অ্যাপ্স দিয়ে সাহায্য করছে, যেন এই অবহেলিত দোকানিদের ব্যবসায়টা হয় আরও প্রসারিত। 

তেমনি দুটি জনপ্রিয় অ্যাপ্স হলো POS (পয়েন্ট অফ সেলিং) ও ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট। দেখে নেই এক নজরে এই দুটি অ্যাপ্স আসলে কী ও এদের ব্যবহার: 

POS (পয়েন্ট অফ সেলিং): সাধারণভাবে বলা যায় একটি পয়েন্ট-অফ-সেল হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যারের সমন্বয়ে গঠিত একটি যন্ত্র যার মাধ্যমে লেনদেন এবং মূল্য পরিশোধ সম্পন্ন হয়। একজন দোকানি পণ্যগুলোর বারকোড পড়ে তার ক্রেতাগণের নিকট দেয়, তারপর ক্রেতারা তাদের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বা নগদে মূল্য পরিশোধ করে। এভাবেই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। বাকি প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু ক্লিকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। 

ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট:  কোনো দোকানের পণ্যের স্টক বা মজুত ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়কে ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট বলা হয়। এখানে পণ্য স্টক করা শুরু থেকে কাস্টমারদের অর্ডার, সেল এবং পুনরায় ক্রয়, এই সকল বিষয়ের ব্যবস্থাপনাকে সার্বিকভাবে ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বলা হয়। 

প্রিয়শপের স্মার্ট স্টক ব্যবহার করে কীভাবে সুবিধা নিবেন? 


মুদি দোকানে যেটা হয় তা হলো নিয়মিত একজন ক্রেতা সবসময়ই দোকানে পাওয়া যায়। এমন একজন হয়তো একটি পণ্য কিনতে চাইলো। কিন্তু পণ্যটির স্টক শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে দোকানি সেটি দিতে পারল না! এতে তেমন আর কি হয়? পাশের দোকান থেকে ক্রেতা পণ্যটি কিনে নেয়; আর দুই একবার এমন হলে কাস্টমার সেই দোকানে সকল কেনাকাটা বন্ধ করে নতুন দোকানের নিয়মিত ক্রেতায় পরিণত হয়। এটাই বাস্তবতা! আর এই বাস্তবতায় ব্যবসায়ের জন্য স্টক ম্যানেজমেন্ট খুব জরুরি।

এই সমস্যাটা মাথায় রেখেই প্রিয়শপ দিবে স্টক ম্যানেজমেন্ট সুবিধা অতি শীঘ্রই। আর এই একটি অ্যাপেই মুদি দোকানিরা পাবে তাদের দোকান পরিচালনার সকল সুবিধা। ব্যবসায়ের দৈনিক হিসাব নিকাশ, আয়-ব্যয় এবং ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট এর জন্যই প্রিয়শপের এই অ্যাপটি হবে সেরা। স্টক ম্যানেজমেন্ট বা ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট অ্যাপের ফিচারগুলো দেখে নেব এক নজরে-


মুদি দোকান ব্যবসায় সফলতার জন্য স্টাফিং এবং ট্রেনিং

একটি মুদি দোকানে যদিও দোকানি একাই ব্যবসায়টা সামলায়। তবুও দোকানটা যখন একটু বড় হয় তখন কিছু কর্মী লাগে। মাল সামান প্যাক করে দেয়া, অনেক ক্রেতা সামলানো, দোকানটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা, কত কাজ! আর দোকানের কর্মী যদি হয় বেঠিক, তখন কিন্তু দোকানের পিছনে এত খরচ, পরিশ্রম সবটাই যায় বৃথা। 

তাই দোকানের সফলতা নির্ভর করে শুধুমাত্র পণ্য সরবরাহের উপর নয়, বরং দক্ষ স্টাফিং এবং কার্যকরী ট্রেনিংয়ের উপরও। সঠিক কর্মী নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ মুদি দোকানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনাকে করে উন্নত।

সঠিক স্টাফ নির্বাচন এর ক্ষেত্রে ভদ্র, অভিজ্ঞ ও সৎ কর্মী নেয়ার কোন বিকল্প নেই। আবার অনেক সময় হয় যে বেকার বা খুব বেশি  শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন ছেলে যাদের অভিজ্ঞতা নেই, কিন্তু দ্রুত শেখার মানসিকতা আছে তারাও কর্মী হিসেবে বেশ ভালো। 

আমাদের দেশে এখনও মুদি দোকান চালাবে এমন প্রশিক্ষণ নেই। মুদি দোকান খুলবে এই ব্যবসায়পর প্রসেসেরই প্ৰশিক্ষণ নেই। তবুও ভবিষ্যতে যদি কখনও ট্রেনিং দেয়া হয় তাদের, তাহলে সবার আগে যেটা করতে হবে সেটা হলো ক্রেতা কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে, ডিজিটাল যত অ্যাপ্স আছে সেটা নিয়ে একটু ট্রেইন করা ও স্টক ম্যানেজ করা।  

একজন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী মুদি দোকানের বিক্রয় ও সেবার মান উন্নত করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসায়ের সফলতা নিশ্চিত করবে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং কর্মীদের সঠিকভাবে পরিচালনা করাই ব্যবসায়ের টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি।

মুদি ব্যবসায় কীভাবে স্থায়ী করা যায়?

একটা মুদি দোকান চালানো সহজ নয়, প্রতিদিনই টিকে থাকার লড়াই করতে হয়। আর শুধু ভালো ভালো পণ্য দিয়ে দোকান ঠাসা করলেই হবে না, বরং লাগবে পুঁজি, সঠিক পরিকল্পনা, নির্ভুল হিসাব নিকাশ নির্ভরযোগ্য সরবরাহ সাপ্লাই চেইন, সাথে আরও অনেক কিছুই। নিচে কিছু কার্যকর উপায় দেওয়া হলো—

১. গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা: গ্রাহক কী চায়, কখন সবচেয়ে বেশি চায়, সঠিক সময়ের মধ্যই পণ্য মজুদকরণ, মৌসুমি ও ট্রেন্ডি পণ্য রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকা। 

২. সুন্দর ও মার্জিতভাবে গ্রাহকদের সাথে ডিল করা: ক্রেতাদের সাথে সদাচরণ করা ও তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য সাজেস্ট করা, বিশ্বস্ত ও নিয়মিত ক্রেতাদের জন্য অফার রাখা। 

৩. হিসাব-নিকাশ সঠিকভাবে রাখা: প্রতিদিনের বিক্রির হিসাব রাখা, ম্যানেজমেন্ট ভালোভাবে করা ও অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো, মাসিক আয়-ব্যয়ের রিপোর্ট করা এবং কোন পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে তা বিশ্লেষণ করা। 

প্রিয়শপ ব্যবহারের গুরুত্ব 

একবিংশ শতাব্দীতে প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় উপহার অনলাইন শপিং। আর বর্তমান সময়ে অনলাইন শপিং এর সাথে পরিচিত না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। অনলাইন শপিং আপনাকে দিবে ঘরে বসে রোদ-বৃষ্টি আর ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে দোকান ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করার বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা থেকে চিরমুক্তি। 

এসব সুযোগ-সুবিধা শুধুমাত্র এন্ড কাস্টমারদের জন্য হলেও এর সুবিধা পায়নি কোন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তারা। তারা তাদের পণ্য সরবরাহ থেকে শুরু করে পণ্য দোকান পর্যন্ত আনা সবকিছুই নিজে নিজেই করে থাকেন, যা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পাশাপাশি এতে খরচও হয় অনেক। এছাড়া পণ্য সংগ্রহ করার জন্য দোকান বন্ধ করার ফলে ব্যবসায়ে ক্ষতি তো আছেই। এসকল সমস্যা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে দেশীয় বি-টু-বি মার্কেটপ্লেস প্রিয়শপ। 

আমাদের দেশের অধিকাংশ রিটেইলারই গতানুগতিক রিটেইল ব্যবসায়ের সাথে অভ্যস্থ। পণ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে পণ্য দোকান পর্যন্ত নিয়ে আসা, ক্রেতার হিসাব রাখা সবকিছু সে গতানুগতিক ধারায় একাই করে আসছে। 

প্রথমত, বিভিন্ন পণ্য সংগ্রহের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সাপ্লাইয়ারের কাছে যেতে হয় যা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এছাড়া বেশির ভাগ দোকানিই একা দোকান সামলায়; সেক্ষেত্রে দোকান বন্ধ রেখে সাপ্লাইয়ারের কাছে যেতে হয়। এতে করে বিক্রি এবং ব্যবসায়ের ক্ষতি হয়। এছাড়া যাওয়া-আসাসহ পণ্য পরিবহনে বেশ বড় অংকের টাকা খরচ হয়। 

প্রিয়শপ এই সমস্যা সমাধানে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সকল ব্র্যান্ডকে একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে। এতে করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রিয়শপ এ্যাপের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় সকল পণ্য যখন খুশি তখন অর্ডার দিতে পারবে। অর্ডার পাওয়ার পরই প্রিয়শপ লজিস্টিক টিম তাদের সেই সকল পণ্য রিটেইলারদের সাপ্লাই চেইন সংক্রান্ত সকল সমস্যা পাশ কাটিয়ে তাদের দোকানে পৌঁছে দেয়। এতে করে রিটেইলাররা তাদের ব্যবসায়ে বেশি সময় দিতে পারছে। এবং তাদের ব্যবসায় আগের তুলনায় অন্তত ২০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বেশ ভূমিকা রেখেছে। 

কেন প্রিয়শপ থেকে অর্ডার করবেন:

ট্র্যাডিশনাল ব্যবসায় করে আসা সকল রিটেইলারকে ডিজিটাইলজেশনের মাধ্যমে নতুন ধারায় নিয়ে আসার পাশাপাশি তাদের জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে প্রিয়শপ। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রিয়শপ দিচ্ছে বিভিন্ন সুবিধাসমূহ। এর মধ্যে-

১. সব সমাধান এক অ্যাপে: প্রিয়শপ রিটেইলারদের দিচ্ছে এক অ্যাপে সকল পণ্যের সুবিধা। এতে করে তাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে প্রোডাক্ট সংগ্রহের ঝামেলা পোহাতে হয় না।

২. লজিস্টিক সাপোর্ট: ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে পণ্য সংগ্রহের পর দোকান পর্যন্ত নিয়ে আসা।  এর পেছনেই একজন রিটেইলারদের খরচ ও সময় চলে যায়। এ সমস্যা সমাধানে প্রিয়শপে পাচ্ছেন প্রিয়শপ অ্যাপের মাধ্যমে যখন খুশি তখন অর্ডার দেয়ার এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে ফ্রি ডেলিভারির সুবিধা।

৩. বাকিতে কেনার সুবিধা: প্রিয়শপ এ্যাপের মাধ্যমে যেকোন রিটেইলার শর্ত সাপেক্ষে বাকিতে পণ্য ক্রয় করতে পারে।

৪. দেশের প্রথম হোয়াটসঅ্যাপ মার্কেটপ্লেস: প্রিয়শপ দিচ্ছে দেশের প্রথম হোয়াটসঅ্যাপ মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে অর্ডার করার সুবিধা। যা তার শপিং এক্সপেরিয়েন্সকে আরো সহজ ও দ্রুত করে তোলে। 

প্রিয়শপ তাদের রিটেইলারদের চাহিদা বুঝে। এবং সেসব নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও প্রিয়শপ তাদের গ্রাহকদের জন্য নানান সুবিধা নিয়ে আসবে। এবং এই সেবার পরিধি খুব শীঘ্রই দেশের ৬৪ জেলার রিটেইলাররা উপভোগ করতে পারবে।   

 

মুদি ব্যবসায়ে কী কী ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়?


যেহেতু অল্প পরিমাণ পুঁজি নিয়েই মুদি বিজনেস করা যায় সেহেতু সবাই মুদি বিজনেস শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে সহজেই। শুরু করা গেলেই যে টিকে রাখা যাবে ব্যবসায়টা তা কিন্ত না। 

প্রতিদিন নতুন নতুন প্রতিযোগী আসছে, বাজারের দাম উঠানামা করছে, আর ক্রেতাদের চাহিদাও বদলাচ্ছে, চাহিদা আছে কিন্তু সময়মত সাপ্লাই নেই দোকানে, এরকম হাজারো সমস্যায় জর্জরিত। তাই, মুদি ব্যবসায় শুরু করতে বা পরিচালনা করতে হলে, তাহলে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো জানা খুব জরুরি। দেখে নেওয়া যাক মুদি ব্যবসায়ের সাধারণ ঝুঁকিগুলো: 

১. বাকি বিক্রির সমস্যা: “ভাই, এখন টাকা নাই, পরে দিয়ে দেবো!” – কি লাগছে না পরিচিত কথাটা? মুদি দোকানগুলো আসলে চলেই প্রতিদিনকার খুচরা আয়ে। আর ক্রেতারা যেটা করে ঠিক এই জায়গাতেই যেয়ে প্রচুর পরিমানে ধারে পণ্য কিনে। এতে করে দোকানিদের নগদে টান তো পরেই আবার এই দেনাগুলো অনেকটাই অনিশ্চিত।

২.  সরবরাহ সংকট ও বাজারের দামের ওঠানামা: গলিতে গলিতে মুদি দোকান থাকলেও তাদের জন্য পণ্য স্টক করাটা বেশ কঠিন। কারণ মাল শেষ হলেই আনতে যেতে হবে পাইকারি বাজারে। ঢাকার রাস্তায় মাল আনতে গেলে দিনটাই শেষ, এত জ্যাম! আর থাকল গ্রাম অঞ্চল, ওখানে ভালো ব্র্যান্ডের পণ্য পাওয়া এখনও দুষ্কর। 

আর পাইকারি বাজারের দামের উঠানামা তো আছেই উপরি। একদিন চিনি ১০০ টাকা কেজি, পরদিন সেটা ১৩০ টাকা হয়ে গেল! আবার কোনো সময় বাজারে তেল, পেঁয়াজ বা চালের সংকট দেখা দেয়। ফলে দাম বেশি দিয়ে কিনতে হলেও, কম দামে বিক্রি করতে হয়, কারণ ক্রেতারা তো এই দামেই অভ্যস্ত, এভাবেই মুনাফা  কমে যায়। 

৩.  মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বা নষ্ট হয়ে যাওয়া: মুদি দোকানে পচনশীল পণ্য তো থাকেই যেমন দুধ, ডিম, দই আবার বিস্কুট, বিভিন্ন রকমের তেল, সুজি, ময়দা এগুলো হয় নষ্ট হয় অথবা মেয়াদ  উত্তীর্ণ হয়ে যায়। এর ফলে ক্রেতারা এসব কিনতে চান না, ফলে লোকসান হয়।

৪. সীমিত মূলধন: মূলধন তো এমনিতেই কম এসব ছোট-খাট দোকানগুলোয়। তাই বেস্ট প্রোডাক্টসগুলো চাইলেই স্টক করা যায় না। আর মূলধনের কমতির জন্য প্রায়ই ধার করতে হয় সুদী ব্যবসায়ীদের থেকে। সুদের চক্করে পড়ে তাদের অনেকেরেই দোকান থেকে পথে বসতে হয়।  

৫. বিশ্বাসযোগ্য ডিস্ট্রিবিউটের অভাব: অনেক অনেক সাপ্লাইয়ার যেমন ইউনিলিভার, এসিআই, পুষ্টি – দেশি বিদেশি ব্র্যান্ড এর তো অভাব নেই।  কিন্তু এই ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট নিতে গেলে নেই তেমন কোন ভরসাযোগ্য ডিস্ট্রিবিউটর যার কাছ থেকে সঠিক দামে নিতে পারবে এর সব কিছু।

৬. অসংখ্য প্রতিযোগী: এক মুদি দোকানের পাশে বা সামনেই মুদি দোকান; আর বাড়তি হিসেবে আছে বড় সুপারশপ কিংবা অনলাইন গ্রোসারি প্ল্যাটফর্ম, যারা কম দামে ও বাড়তি সুবিধা দিয়ে কাস্টমার ধরে রাখছে। এত প্রতিযোগিতার মধ্যে মুদি দোকান টিকিয়ে রাখাটা একটা চ্যালেন্জ। 

ঝুঁকি থেকে উত্তরণের উপায়

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্যতম লাভজনক ব্যবসায় হচ্ছে খুচরা বা মুদি দোকান। ঠিকঠাকভাবে এই ব্যবসায় করা হলে এতে লাভবান হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই ব্যবসায়ে যে ঝুঁকি একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়। নানা কারণে এই ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। আজকে আলোচনা করবো সেসব বিষয়ে সাথে থাকবে সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়ও। চলুন জেনে নেয়া যাক- 

১.  ব্যবসায়ের পরিকল্পনা করুন: আপনি আপনার ব্যবসায় শুরু করার আগে আপনার ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয় যেমন:  আপনার কাস্টমার, কাস্টমারের পছন্দ, এবং আপনার আশেপাশের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে গবেষণা করুন এবং সেই মোতাবেক পরিকল্পনা করুন। আপনার ব্যবসায় সম্পর্কে আপনি যত বেশি জানবেন, ভবিষ্যতে তত কম ঝুঁকির সম্মুখীন হবেন।

২. সব টাকা একেবারে বিনিয়োগ না করা: যেকোন ব্যবসায়ে মূলধন লাগে, মুদির দোকান তার বাইরে না। তবে, সম্পূর্ণ মূলধন বিনিয়োগ করে ফেললে ঝুঁকির কবলে পড়তে হতে পারে। এছাড়াও, ব্যবসায়ের লাভের সম্পূর্ণ অংশ ব্যবসায় সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ব্যবহার না করা উচিৎ। 

৩. মান সম্পন্ন পণ্য বিক্রি করা: পণ্যে ভেজাল বা খারাপ পণ্য বিক্রি করা আপনার এই ব্যবসায়কে ব্যর্থ করতে যথেষ্ট। একজন মুদির দোকানি প্রকৃত অর্থে চাহিদা পরিপূরণের কারিগর হিসেবে কাজ করে।  ক্রেতার চাহিদার কথা মাথায় রেখে দোকানিকে অবশ্যই পণ্য সরবরাহ করতে হবে। সেক্ষেত্রে মানসম্পন্ন পণ্য বিক্রয়ের বিকল্প নেই। 

আর মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহের জন্য প্রয়োজন সঠিক সাপ্লায়ার। বিভিন্ন সাপ্লায়ার থেকে পণ্য সংগ্রহ করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, যা ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে প্রিয়শপ – দেশের সর্ববৃহৎ বি.টু.বি মার্কেটপ্লেস। 

 ৪. প্রতিদিনের হিসাব রাখা: যেকোন ব্যবসায়ের একটি অন্যতম ভিত্তি হিসাব রাখা। তবে, সচরাচর নিজের ব্যবসায় হওয়ায় আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব রাখা হয় না। এতে করে ব্যবসায়ের অবস্থান বোঝা যায় না। তাই, প্রতিদিনের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রতিদিন করে ফেললে দোকানের অবস্থা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায় এবং সে অনুযায়ী পরবর্তীতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া যায়।

৫. কম জনবল বা বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়া: সাধারণত আপনি কতজন কর্মচারী রাখবেন তা নির্ভর করে আপনার দোকানের সাইজের উপর। কর্মচারী কম হলে গ্রাহককে পণ্য দিতে বেশ সময় লাগবে যা গ্রাহকের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে যায়। আবার দরকারের বেশি কর্মচারী নিয়োগ দিলে আপনার খরচের লিস্ট বেড়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।

৬. ক্রেতার সাথে ভাল ব্যবহার করা: ক্রেতার সাথে ভালো ব্যবহার করা ব্যবসায়ের উন্নতির সিঁড়ি বলা যায়। ক্রেতার সাথে একটু সময় নিয়ে কুশল বিনিময় করার ফলে যদি ক্রেতার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা যায় তাহলে ক্রেতার বারবার ফিরে আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 

৭. বাকিতে ব্যবসায় করা: অনেকে ক্রেতা ধরে রাখার জন্য মাত্রাতিরিক্ত বাকি দিয়ে থাকে। একটা সময় গিয়ে বাকির পরিমান এতটা বৃদ্ধি পায় যা ব্যবসায়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই মাত্রাতিরিক্ত বাকি দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।  

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকবেই; কোন ব্যবসায়ই ঝুঁকিমুক্ত নয়। তবুও উপরোক্ত কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে ব্যবসায় করলে ব্যবসায়ে উন্নতি আসবে অবশ্যই। শুভকামনা রইলো আপনার ব্যবসায়ের জন্য। যেকোন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে প্রিয়শপ আছে আপনার পাশে। 

মুদি দোকান ব্যবসায়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি এবং সম্প্রসারণের সুযোগ

বাংলাদেশে মুদি ব্যবসায় একটি লাভজনক খাত যা ক্রমশ আধুনিক ও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে। মুদি ব্যবসায় বড় পরিসরে করতে হলে ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল বা একাধিক শাখা খুলে সম্প্রসারণের কৌশল কাজে লাগালে মুনাফা বাড়বে দ্বিগুণ। আর এতে করে ব্যবসায়ের আয় ও ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ানো সহজ হয়। 

ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল হলো ব্যবসায়কে বড় করার স্মার্ট উপায়। ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেলে একটি মুদি দোকান হয় ফ্র্যাঞ্চাইজি গ্রহণ করতে পারে (অন্যের ব্র্যান্ডের অধীনে মুদি দোকান), অথবা ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রদান করা যায় (নিজের ব্যবসায় অন্যকে চালানোর অনুমতি দেয়া)।

ফ্র্যাঞ্চাইজি গ্রহণ করার সুবিধা কিন্তু অনেক। যেমন পরিচিত ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার, সরবরাহ ও লজিস্টিক সুবিধা, মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপনে সুবিধা ইত্যাদি। 

অপরদিকে ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রদান করে নিজের ব্র্যান্ড বড় করা, যদি একটি সফল মুদি দোকান থাকে এবং এটা বেশ পরিসরে আছে, তাহলে আপনি নিজের দোকানকে ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। সুবিধাগুলো হলো- কম খরচে দ্রুত সম্প্রসারণ, প্যাসিভ ইনকাম, নিজের দোকানটাকে আরও শক্তিশালী ও জনপ্রিয় করা।

একাধিক শাখা খুলে মুদি ব্যবসায় সম্প্রসারণের কৌশল

মুদি ব্যবসায়কে বড় করতে চাইলে একাধিক শাখা খুলে সম্প্রসারণ করা একটি চমৎকার উপায়। তবে এটি সফল করতে হলে সঠিক পরিকল্পনা, অর্থ ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর কৌশল প্রয়োজন। নিচে ধাপে ধাপে ব্যবসায় সম্প্রসারণের উপায় দেওয়া হলো—

১. সঠিক লোকেশন নির্বাচন
২. বিনিয়োগ ও অর্থ ব্যবস্থাপনা
৩. সঠিক সরবরাহ ব্যবস্থা সুনিশ্চিতকরণ
৪. দক্ষ কর্মী ও ব্যবস্থাপনা
৫. দোকানের ইমেজ বজায় রাখা
৬. ডিজিটাল ও অনলাইন প্রসার

মুদি দোকান পরিচালনার জন্য আইনি এবং লাইসেন্স বিষয়ক তথ্য

একটি মুদীর দোকান খুলতে নিচে উল্লিখিত আইনি নথিগুলো বা লাইসেন্সগুলো লাগবে:

নেইম ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট/নাম ছাড়পত্র:

আগে দেখতে হবে যে নামটি দোকানের জন্য পছন্দ করা হচ্ছে তা আগেই অন্য কোনো দোকান ব্যবহার করেছে কিনা। এই ব্যবস্থাটি ২০০৩ সাল থেকে কম্পিউটারাইজ্ড হয়েছে। যখনি খুঁজে পাওয়া যাবে যে, পছন্দ করা নামটি অনন্য বা একক, আরজেএসসি বা রেজিস্টার্ড অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানি এ্যান্ড ফার্মের ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম ছাড়পত্রের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে  হবে। সম্মতিটি পেতে এক ব্যবসায়িক দিনের থেকে বেশি সময় লাগবে না।

আবেদন অনুমোদিত হবার পর পছন্দ করা নামটি ছয় মাসের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এই ছাড়পত্রটি প্রিন্ট করে রেখে এবং একে ইনকরপোরেশন বা সংগঠনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে রাখা লাগবে।

ট্যাক্স আইডি নাম্বার (টিন):

আনুষ্ঠানিকভাবে মুদীর দোকানটি খোলা এবং ব্যবসায় শুরু করার আগে কর রেজিস্ট্রেশনের জন্য জোনাল কর বিভাগে, কোম্পানি সার্কেলের কর উপ-কমিশনের কাছে যেতে হবে। একটি একক ট্যাক্স আইডি নাম্বার লাগবে। 

ট্রেড লাইসেন্স:

সিটি কর্পোরেশন থেকে দোকানের ট্রেড লাইসেন্সটি নিতে হবে। নিকটস্থ উত্তর বা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আবেদন করলেই এটি পাওয়া যাবে। 

ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর রেজিস্ট্রেশন:

এনরবিআর বা জাতীয় রাজস্ব বিভাগের অধীনে ভ্যাট, এক্সাইস, এবং কাস্টম কমিশনের সাথে রেজিস্টার করুন। আপনার দোকানটি যে এলাকায় অবস্থিত সে এলাকার এক্সাইস, ভ্যাট, এবং কাস্টমস বিভাগ দোকানটির ভ্যাট নিয়ন্ত্রণ করে। সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে তিন দিন সময় লাগবে এবং আপনার কোনো খরচ হবে না।

অবশেষে:

মুদি দোকান ব্যবসায় শুরু করা একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনি আবার সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশল অনুসরণ করলে লাভজনকও হতে পারে। প্রয়োজনীয় পণ্য নির্বাচন, বাজার বিশ্লেষণ, ঝুঁকি মোকাবিলা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার—এসবই সফলতার মূল চাবিকাঠি। 

গ্রাহকসেবা, ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই ব্যবসায় গড়ে তোলা সম্ভব। সঠিক পরিকল্পনা, নিষ্ঠা ও উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা মুদি দোকানকে লাভজনক ও সফল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে পারেন।