বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্যতম লাভজনক ব্যবসায় হচ্ছে খুচরা বা মুদি দোকান। ঠিকঠাকভাবে এই ব্যবসায় করা হলে এতে লাভবান হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে এই ব্যবসায়ে যে ঝুঁকি একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়। নানা কারণে এই ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। আজকে আলোচনা করবো সেসব বিষয়ে সাথে থাকবে সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়ও। চলুন জেনে নেয়া যাক-
১। ব্যবসা শুরুর করার আগে ভালোভাবে ভাবুন
কোনো ব্যবসা শুরুর আগে পরিকল্পনা করা জরুরি। ভাবনা ছাড়া দোকান খুললে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হতে পারে। বাজারে কী চাহিদা আছে, প্রতিযোগিতা কেমন, আপনার দোকানের জন্য সঠিক লোকেশন কোনটা, এসব ভাবা দরকার।
বাজার গবেষণা করা দরকার যাতে বোঝা যায় কোন পণ্য বেশি বিক্রি হয়, কোন দামে বিক্রি করলে বেশি লাভ হয়, আর ক্রেতারা কোন ধরণের পরিষেবা পছন্দ করেন।
পাশাপাশি, ব্যবসার জন্য মূলধন ঠিক করতে হবে। দোকানের জন্য কী কী লাগবে, কত টাকা বিনিয়োগ করবেন, স্টক কতটুকু রাখবেন, এসব ঠিক করে নিলে ব্যবসা ভালোভাবে চালানো সহজ হবে।
পরিকল্পনার জন্য একটা চেকলিস্ট রাখতে পারেন। এতে দোকানের নাম, ঠিকানা, মূলধনের হিসাব, স্টকের তালিকা, প্রতিযোগীদের নাম, বিক্রির লক্ষ্য ইত্যাদি লিখে রাখলে সুবিধা হবে।
২। সব টাকা একেবারে বিনিয়োগ না করা:
যেকোন ব্যবসায়ে মূলধন লাগে, মুদির দোকান তার বাইরে না। তবে, সম্পূর্ণ মূলধন বিনিয়োগ করে ফেললে ঝুঁকির কবলে পড়তে হতে পারে। এছাড়াও, ব্যবসায়ের লাভের সম্পূর্ণ অংশ ব্যবসায় সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ব্যবহার না করা উচিৎ।
৩। পণ্য কেনার ক্ষেত্রে বুঝে-শুনে সিদ্ধান্ত নিন
দোকানে ভালো মানের পণ্য রাখতে হবে, নইলে ক্রেতারা একবার এসে দ্বিতীয়বার আর আসবে না। অনেক সময় কম দামের লোভে খারাপ মানের পণ্য কেনা হয়, যা পরে বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বিশ্বাসযোগ্য সরবরাহকারীর কাছ থেকে পণ্য কিনতে হবে। যেমন, প্রিয়শপ থেকে পাইকারি দামে ভালো মানের পণ্য কিনতে পারেন, এতে সময় ও টাকা দুই-ই বাঁচবে।
পণ্য কেনার সময় দেখতে হবে কোন কোন পণ্য বেশি বিক্রি হয়। যেমন, চাল, ডাল, তেল, লবণ, বিস্কুট, নুডলস, সাবান—এগুলো সবসময় চাহিদায় থাকে।
একটা তালিকা করে রাখুন কোন পণ্য সবসময় দোকানে থাকা দরকার। এতে অপ্রয়োজনীয় স্টক না বাড়িয়ে লাভজনকভাবে ব্যবসা চালানো যাবে।
৪। হিসাব-নিকাশ না রাখলে ব্যবসা ধাক্কা খেতে পারে
অনেক ব্যবসায়ী হিসাব-নিকাশ ঠিকমতো না রাখায় ব্যবসায় ক্ষতি হয়। টাকা আসছে, যাচ্ছে—কিন্তু লাভ-ক্ষতির হিসাব ঠিকমতো না রাখলে একসময় দেখা যাবে দোকান চালানোই মুশকিল হয়ে গেছে।
হিসাব রাখা খুব কঠিন কিছু নয়। খাতায় লিখে রাখা যায়, আর চাইলে মোবাইলের নোট বা হিসাব রাখার অ্যাপ ব্যবহার করা যায়।
প্রতিদিন বিক্রির টাকা, খরচের হিসাব এবং বাকির পরিমাণ লিখে রাখলে বোঝা যাবে আসলে লাভ হচ্ছে নাকি ক্ষতি।
একটা নির্দিষ্ট খাতা বা ডায়েরি রাখুন যেখানে প্রতিদিনের লেনদেন লিখে রাখবেন। এতে ব্যবসা আরও গোছানো হবে।
৫। অযথা বাকি দেয়া যাবে না
বেশি বাকি দিলে ব্যবসার মূলধন আটকে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, অনেক টাকা বাকি চলে গেছে, কিন্তু সেই টাকা আর ফেরত আসছে না।
শুধু বিশ্বস্ত ক্রেতাদের বাকি দিন। যারা নিয়মিত কেনাকাটা করেন এবং ঠিক সময়ে টাকা পরিশোধ করেন, তাদের জন্য ছাড় দেওয়া যেতে পারে।
বাকির হিসাব খাতায় বা মোবাইলে লিখে রাখা ভালো। অনেক সময় মনে রাখা সম্ভব হয় না, ফলে টাকা ফেরত পাওয়া কঠিন হয়।
বেশি পরিমাণে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য বাকি দেবেন না। এতে আপনার ব্যবসা ভালো চলবে।
৬। কম জনবল বা বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়া:
সাধারণত আপনি কতজন কর্মচারী রাখবেন তা নির্ভর করে আপনার দোকানের সাইজের উপর। কর্মচারী কম হলে গ্রাহককে পণ্য দিতে বেশ সময় লাগবে যা গ্রাহকের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে যায়। আবার দরকারের বেশি কর্মচারী নিয়োগ দিলে আপনার খরচের লিস্ট বেড়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।
৭। ক্রেতার সাথে ভাল ব্যবহার করা:
ক্রেতার সাথে ভালো ব্যবহার করা ব্যবসায়ের উন্নতির সিঁড়ি বলা যায়। ক্রেতার সাথে একটু সময় নিয়ে কুশল বিনিময় করার ফলে যদি ক্রেতার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা যায় তাহলে ক্রেতার বারবার ফিরে আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৮। চুরি ও প্রতারণা থেকে সাবধান থাকুন
অনেক সময় দোকানে চুরি হয়ে যায়, যা ব্যবসার বড় ক্ষতি করে। তাই সব সময় সচেতন থাকতে হবে।
কর্মচারী ও ক্রেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখুন, কিন্তু নজরদারি করতে ভুলবেন না। ক্যাশ বাক্স ও দামী পণ্যের দিকে বিশেষ নজর দিন।
দোকানে ক্যামেরা লাগাতে পারেন, এতে চোর ধরতে সুবিধা হবে। যদি ক্যামেরা সম্ভব না হয়, তাহলে নিজেই প্রতিদিন দোকানের পণ্যের হিসাব মিলিয়ে দেখুন।
জাল টাকা চেনার সহজ উপায় জানতে হবে। ব্যাংকের সঠিক নিয়ম অনুসারে টাকা পরীক্ষা করুন, যেন প্রতারণার শিকার না হন।
পরিশেষে
মুদি ব্যবসা ভালোভাবে চালাতে হলে কিছু ঝুঁকি থাকবেই, তবে পরিকল্পনা থাকলে এগুলো সহজেই সামলানো যায়।
পরিকল্পনা করে ব্যবসা করলে ধাপে ধাপে সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। অযথা বাকি না দেয়া, হিসাব রাখা, ভালো মানের পণ্য রাখা এবং নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখলে ব্যবসা সফল হবে।
প্রিয়শপ থেকে পাইকারি দামে ভালো মানের পণ্য পেতে পারেন, যা আপনার ব্যবসার জন্য উপকারী হতে পারে।
শুভকামনা রইলো আপনার ব্যবসায়ের জন্য। যেকোন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে প্রিয়শপ আছে আপনার পাশে।